আমার বাবা একজন রাজনীতিবিদ। জন্মের পর থেকে বাবার ভালবাসা পাই নি। খুব ব্যাস্ত থাকে। রাত করে ঘরে ফিরে। আমি তখন ঘুমিয়ে যাই। কখনো কখনো রাতে ঘুম ভাঙে বাবা মা এর ঝগড়া শুনে। আমার বাবাকে আমি খুব কম ভালবাসি। আমার আম্মু আমার সব খরচ চালায়। আর বাবা যা আয় করে তা দাদু বাড়িতে সব ব্যয় করে। ফলাফল আমি বাবাকে ভয় ও পাই না। রাতে দেরি করে বাড়ি আসলে কেউ আমাকে কিছু বলতে সাহস ও করে না। আমি কখনো বাবা কে বুঝতে চাইনি। অথচ আমার বাবা আমাকে একটু খানি সময় পেলে ও বুড়ি বুড়ি বলে কাছে ডাকে। আমার মন ভাল থাকলে কাছে যাই না হলে দুরেই থাকি। একটা সময় উশৃঙ্খখল জীবন যাপন শুরু করি। ভাল কিছু বন্ধু ছিল। একসাথে মজা, আড্ডা সব হত। হটাত একদিন বাবাকে খুব বিচলিত দেখলাম। কিছু জিজ্ঞাসা করি নি। দুদিন পর মা এর কাছে ফোন আসলো আমার দাদু মারা গেছে। আমি মনে মনে ভাবলাম ভালই হইছে। ওই বুড়োর জন্যে আমাদের সংসারে অশান্তি। অবশ্য দাদু বাড়ি গেছিলাম। বাবাকে এতো বেশি বিচলিত আর বিমোহিত কখনো দেখি নি। বাবা কেন যেন ডুকরে ডুকরে কাদতেছিল। আমি মনে মনে ভাবছিলাম যে ঠং হবে। জীবনের কাছে হেরে গেছি আজ । সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাও এমন ভাবে ধোঁকা দিছে যেন আমার মন কে বিশ তলা ইমারতের ছাঁদ থেকে আছড়ে মেরেছে। আজ তীব্র একা অনুভব করি। ফালতু বাবা টা ও ইদানীং বাড়িতে বেশি সময় থাকে। চোখের সামনে থাকে। আর আমাকে বলে কি করি, খাচ্ছি না নাই, পড়ালেখার কি খবর ব্লা ব্লা। কয়েকবার বাবাকে বাবার জায়গায় রাখিনি। বকা দিছি মন মত। দায়িত্ববান না, ব্লাডি কালপ্রিট ইত্যাদি। কিন্তু বাবা কোনরূপ প্রতিউত্তর করে নি। কেন জানি আমার সাথে খুব সখ্যতা গড়ে উঠল। আমি আমার মানুষরূপী শয়তান বন্ধুদের কথা ভুলেই গেলাম প্রায়। এখন বাবার সাথেই মজা করি। আড্ডা দেই। বাবা এখন আর দাদু বাড়ি যায় না কেন জানি। আর আগের মত ব্যাস্ত ও থাকে না। সেদিন দেখলাম বাবা বিরয়ানী রান্না করছে। আর মা বাবা মিলে এখন মনে হয় আমাদের একটা সুখী পরিবার। আমাকে বাবা আমাকে একদিন দাদু বাড়ি নিয়ে গেল। আমি জানতাম না দাদু মারা যাবার পূর্ণ এক বছর হল। বাড়িতে মিলাদ। আবার একবছর পর বাবার চোখে জল। অথচ এর মাঝে আম্মুর তীব্র বকুনি, আমার ক্রোধ কোনটাই তার চোখে বিষাদের অনল আনতে পারে নি। খুব ভাবলাম। বাবাকে আসার সময় প্রশ্ন করলাম। বাবা আমাকে বলল তুই আমাকে ভালবাসিস না বুড়ি? আমি বললাম হুম, খুব। বাবা বলল আমি আমার বাবা তথা তোর দাদুকে খুব ভালবাসতাম। তুই তো জানিস সামান্য বেতনের চাকরি করি। তোর দাদু আমাকে ডেকে বলেছিল পুবের দুই কাঠা জমি যেখানে তোর মা শায়িত আছে তার পাশের এক কাঠা জমি তা বন্দক আছে। আর সেই জমিটা না হলে তোর মায়ের পাশে আমার কবর হবে না। মিনতি করে বলেছিল বাবা যেন ফিরাই। আর সে জমিটা আমার চাকরির জন্যেই বন্দক ছিল। আমার বাবার এই ইচ্ছাটা অপূর্ণ থাকতে দেই নি মা। জমিটা ফেরানোর কিছুদিনের মধ্যেই তো তোর দাদু মারা গেল। আমি কি যেন ভাবতেছিলাম। বাবা আবার মজা করে বলল ভাগ্যিস তোর মা অন্তত তোর দেখাশুনা করছে। এ ও বলল যে মা আমাকে ভুল বুঝিস না। সেদিন টের পেয়েছিলাম, আমার বাবার ও তার বাবা আছে। দায়িত্ব টা আমার ও যে অনেক।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বাবা বিষয়টাকে নিজের বেলায় শুধু দেখলে হয় না। বরং এটাও ভাবা উচিত আমাদের যে আমার বাবার ও কিছু দায়িত্ব থাকে তার বাবার প্রতি। এজন্যে বাবাদের উচিত দাদুদের খেদমত করা। তেমনি আমরা যারা বয়স কম। বাবাদের ভুল বুঝা ও উচিত না। বাবা রা খুব ভাল বন্ধু হয়। আর সত্যিকার অর্থেই বাবারা এমনি হয়।
২৫ জুলাই - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।